পরকিয়া নিয়ে ইসলাম কি বলে!!!

<3 <3 <3 পরকিয়া নিয়ে ইসলাম কি বলে!!! <3 <3 <3




##পরকিয়া কি............???



নিজ স্ত্রী বা স্বামীকে রেখে পর নারী বা পুরুষের সাথে অবৈধ মিলনকে পরকীয়া বলে। দেশে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এই পরকীয়া প্রেম। এই নিষিদ্ধ প্রেমের আগুনে জ্বলছে দেশ জাতি ও পরিবার। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে সাজানো গোছানো সোনার সংসার। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পরিবার সর্বত্রই ভয়ানক ব্যাধি হিসাবে দেখা দিয়েছে এই অভিশপ্ত অভিসার।


আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ, মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র আর বিভিন্ন গার্ডেনে দেখা মিলছে এসব নিষিদ্ধ জুটির। পরকীয়ার জেরে দাম্পত্য কলহের ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সন্তানদের উপর। এর বিষবাষ্পে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হচ্ছে সাজানো গোছানো সোনার সংসার। তাই এখনই ভাবতে হবে এর প্রতিকার ব্যবস্থা নিয়ে। নতুবা এর চরম খেসারত দিতে হবে অনাগত প্রজন্মকে।


বাস্তব কথা হলো ইসলামী অনুসাশনই রুখে দিতে পারে পরকীয়ার ভয়াল থাবাকে। পারে পরকীয়ার ভাইরাসকে সমাজ থেকে চিরতরে নির্মূল করতে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো যে ইসলামই পারত প্রাণঘাতী, পরিবারঘাতী ও সমাজঘাতী পরকীয়ার বিষাক্ত ছোবল থেকে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে মুক্ত করতে ও মুক্ত রাখতে কিন্তু সে ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্যরত ব্যক্তিরা। এরপর শুধু আফসোস আর হাহাকার, কি ফল বয়ে আনবে মুক্তির একমাত্র পথ ইসলাম? কল্যাণের ধর্ম ইসলামে পরকীয়া হারাম ও চরম ঘৃণ্য কাজ। এর পরিণাম ভয়ানক। শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।


##কোরআন হাদিসের আলোকে পরকিয়া ঃ-



বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে হযরত উমর ফারুক রা. রাসূলুল্লাহ্ সা. এর মিম্বরে উপবিষ্ট অবস্থায় বললেন, মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ সা. কে সত্য সহ প্রেরণ করেন এবং তার উপর নাযিল করেন কিতাব তথা আল কুরআন। কুরআনে যে সকল বিষয় অবতীর্ণ হয়, তন্মধ্যে রজম তথা প্রস্তরাঘাতে হত্যার বিধানও ছিল। যা আমরা পড়েছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। এরপর মহানবী সা.ও প্রস্তরাঘাতে হত্যা করেছেন এবং তারপরে আমরাও করেছি। এখন আমি আশংকা করছি যে, সময়ের চাকা আবর্তিত হওয়ার পর কেউ একথা বলতে শুরু না করে যে আমরা প্রস্তরাঘাতে হত্যার বিধান আল্লাহ্র কিতাবে পাইনা। ফলে সে এমন একটি ধর্মীয় কর্তব্য পরিত্যাগ করার কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে যা আল্লাহ্ নাযিল করেছেন।

** তোমরা মনে রেখো, প্রস্তরাঘাতে হত্যার বিধান আল্লাহর কিতাবে সত্য এবং তা বিববাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যদি ব্যভিচারের শরীয়াত সম্মত সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় কিংবা গর্ভ ও স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়। [বুখারী: ২/১০০৯, মুসলিমঃ /৬৫]


**অপর বর্ণনায় আছে সাহাবী আবু হুরাইরা রা. বলেন মায়েয আল আসলামী রাসুলুল্লাহ সা. এর নিকট এসে বললেন সে ব্যাভিচার করেছে। একথা শুনে মহানবী সা. তার থেকে চেহারা ফিরিয়ে নিলেন। এরপর মায়েয মহানবীর সামনে অন্য দিক দিয়ে আসলেন। চারবার এমন করার পর মহানবী সা. তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার নির্দেশ দিলেন। তাকে হাররা প্রান্তরে নিয়ে প্রস্তরাঘাত শুরু করা হলো। তিনি ব্যথার তিব্রতা সহ্য করতে না পেরে দৌঁড়ে পালাতে লাগলেন। জনৈক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে উটের চোয়ালের হাড় দিয়ে তাকে আঘাত করলেন আর অমনি অন্যরাও আঘাত শুরু করলে । একপর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়লেন। [তিরমিযী: ১/২৬৪ পৃষ্ঠা, বুখারী :হা. ১০০৮, মুসলিম : ২/৬৬,৬৭,৬৮]



** এছাড়াও বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীর একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে রাসুলুল্লাহ্ সা. বিবাহিত নারী পুরুষকে ব্যাভিচারের অপরাধে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করেছেন এ ব্যাপারে কোন রকমের ছাড় দেননি। [বুখারী ঃ /১০০৬,-১০০৯, মুসলিমঃ ২/৬৫-৭০, তিরমিযী ঃ ১/৬৪-২৬৫]


**অন্য বর্ণনায় মহানবী সা. বলেন-হে লোক সকল তোমরা অবৈধ যৌন মিলনকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। । তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি পরকালে।


>>>দুনিয়াস্থ তিনটি পরিণাম হলো- ১. শ্রীহীনতা ২. অভাব-. দারিদ্রতা ৩. জীবনকাল হ্রাস পেয়ে মৃত্যু বরণ।


>>> আর পরকালের তিনটি হলো – ১. পরম দয়ালূ আল্লাহর ক্রোধ, ২. মন্দ হিসাব ৩. দোযখের শান্তি। [শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী; আল জামিউল কাবির সুয়ূতী]



>>>>অপর এক বর্ণনায় আছে মহানবী সা. বলেন-‘‘ চার প্রকার মানুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাদের উপর আল্লাহ ক্রোধ নেমে আসে। ১.বারবার শপথকারী ব্যাবসায়ী ২. দাম্ভীক ফকীর ৩. বৃদ্ধ ব্যাভিচারী ৪. অত্যাচারী শাসক । নাসাঈ।


**রাসুলুল্লাহ সা. বলেন ‘‘আমার উম্মত ততদিন ভালই থাকবে যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ব্যাভিচার ও অবৈধ যৌন সম্ভোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়বে। আর যখন ব্যাভিচার তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে তখন তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি গ্রাস করবে । [মুসনাদে আহমাদ]


পরকীয়াকারী শারীরিকভাবেও বিভিন্ন ক্ষতির শিকার হয়। স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার দেহে ছড়িয়ে পড়ে এইডস, সিফিলিস, প্রমেহ, গনোরিয়া, হৃদরোগ জাতীয় মরণব্যাধি। বর্ণিত ব্যাধি গুলোর প্রত্যেকটির চুড়ান্ত পরিণাম মৃত্যু। [আল খাতায়া ফি নাজরিল ইসলাম, আফীফ আব্দুল ফাত্তাহ তাব্বারা- ১০৬-১০৮]



অথচ ভেবে দেখিনা এ বিপর্যয়ের উৎস কোথায়? এর মূল উৎস পর্দাহীনতা ও নগ্নতা । তাই কল্যাণের ধর্ম ইসলাম সেই উৎসটাই উপড়ে ফেলতে চেয়েছে। তাই পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছে দৃষ্টি অবনত রাখতে আর নারীকে বলেছে দৃষ্টি অবনত রাখার পাশাপাশি দেহ সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে এবং কঠোর ভাবে নির্দেশ দিয়েছে শরীআত সমর্র্থিত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যেতে।


**একান্তই বের হতে হলে হবে পর্দায় মোড়িয়ে সম্পূর্ণ দেহ ঢেকে। এতে নারী-পুরুষ থাকবে কলংকমুক্ত আর সমাজ সংসার হবে নির্মল সজিব। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- “ তোমরা নারীদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের (পুরুষদের) এবং তাদের (নারীদের) অন্তরের জন্যুু অধিক পবিত্রতার কার্যকর উপায়” [সূরা আহযাব-৫৩]


**অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে – “হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরে কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” [আহযাব-৫৯]


*** আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- “ আপনি মুমিনদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে আর হেফাজত করে স্বীয় যৌনাঙ্গকে। এ ব্যবস্থা অধিকতর পবিত্রতার সহজ উপায় । তাদের কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন।


***আর মুমিন নারীদেরকে বলুন তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং হেফাজত করে স্বীয় লজ্জাস্থানের । তারা যেন স্বীয় স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, আপন নারী, অধিকার ভুক্ত দাসী, যৌনকানামুক্ত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতিত কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ।” (সূরা নূর- ৩০-৩১)।


আরো ইরশাদ হয়েছে – “তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান কর। প্রাক – জাহেলী যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করো না।” সূরা আহযাব-৩১ ।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন চোখের ব্যভিচার হলো কুদৃষ্টি আর জিহ্ববার ব্যভিচার হলো অশ্লীল কথা বলা। নফস আকাংখা করে অশ্লীল কাজের আর যৌনাঙ্গ তা বাস্তবায়ন করে কিংবা তা থেকে বিরত থাকে। ” [আবু দাউদ-হাদীস ২১৫২]


অপর এক বর্ণনায় আছে- মহানবী সা. বলেন“দৃষ্টি হলো শয়তানের তীর। ” একটি হাদীসে আছে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন “নারী গোপন যোগ্য (তাই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা উচিৎ) যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে বিশেষ ভাবে তাকাতে থাকে।” [তিরমীযি হাদীস-১১৭৩]


পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই, ইসলামের সকল অপরিহার্য বিধানই মুমিনের জন্য বাধ্যতামূলক, ঐচ্ছিক নয়। এখানে মন চাওয়া , না চাওয়া ভাল লাগা আর না লাগার কোন স্থান নেই। যে মেনে নেবে সে ইহকাল ও পরকালে নিরাপদ থাকবে আর যে মানবেনা তার কর্মের ফল সে ভোগ করবে দুনিয়া ও আখেরাতে।


আল্লাহ আমাদের সবাইকে আল্লাহ্‌র বিধান মেনে ও দয়াল নবীর রেখে যাওয়া সুন্নত মেনে চলার তৌফিক ভিক্কা দান করুন । আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

নবী প্রেমের ৪১টি পুষ্প!! কিছু গুরুত্বপূর্ণ দরূদ শরীফ ও তার ফজিলত।।

হযরত আলাউদ্দিন আহমদ সাবের কালিয়ার (র) বড় পীরের পর সবচেয়ে জালালি ফায়েজের আউলিয়া।।

হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ)